সত্যবাদিতা বাংলা প্রবন্ধ রচনা - by Composition
সত্যবাদিতা
বাংলা প্রবন্ধ
রচনা |
আরো পড়ুন :-
বর্ষাকাল বাংলা প্রবন্ধ রচনা 2023
ভূমিকা :
সত্যের চেয়ে
বড় গুণ আর দ্বিতীয়টি নেই । এই মহাবিশ্ব চির সত্যের ওপর দণ্ডায়মান । সত্য ও বিশ্বাসের
মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজেকে আবিষ্কার করে, মনুষ্যত্বকে অর্জন করে । ধর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান,
যা কিছু এ পৃথিবীতে আছে তার সব কিছুর মূলে যে চির সত্য লুক্কায়িত, আমরা শিক্ষাদীক্ষা
ও জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে সে চির সত্যকেই অর্জন করি । তাই মানুষের সাধনা সত্যের সাধনা।
বৈশিষ্ট্য :
সত্য বলতে কোনো কিছুর যথাযথ প্রকাশ বোঝায়। আর সত্যবাদিতা অর্থ আরও ব্যাপক । শুধু মিথ্যা না বলা বোঝাতে সত্যবাদিতা বোঝায় না । সত্যকে অবলম্বন করে যেসব বৈশিষ্ট্য বিকশিত হয় তার নাম সত্যবাদিতা। বস্তুত সৎ ও ন্যায়পরাণতার গুণকেই বলে সত্যবাদিতা। সত্যবাদিতার শর্ত হলো কোনো কিছু গোপন না করা, মিথ্যার আশ্রয় না নেয়া, ন্যায়নীতি অবলম্বন করা, অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়া ইত্যাদি ।
সত্য জীবনের স্বরূপ বিকশিত করে । সত্যবাদী লোকের কথা ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকে না । সত্যবাদী মানুষ সবসময় সৎ জীবন- যাপন করেন। এজন্যে তিনি নির্ভীক হন; দৃঢ়চিত্তের ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন । সত্যবাদিতা মানুষকে খাঁটি সোনার মতো নিখাদ করে তোলে । সত্য অবস্থা জানা থাকলে কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে নির্বাহ হতে পারে । সত্যের মধ্যে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয় । সুতরাং সত্যবাদী মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো :
প্রথমত :
তিনি সত্যের অনুসারী;
দ্বিতীয়ত
: ন্যায় ও সৎ কাজে নিৰ্ভীক;
তৃতীয়ত : অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে আপোসহীন ।
সত্যের মধ্য দিয়েই মানুষ অর্জন করে সততা। সততা মানবচরিত্রের অপর একটি মহৎ গুণ। অপরাধের প্রতি বিতৃষ্ণা মনই সততার বাহক । সত্যের অনুসারী মানুষ সৎ' থাকার প্রবণতার মাধ্যমে সততার বৈশিষ্ট্য রূপায়িত করে তোলে । কোনো প্রকার পাপের কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলে তাতে সততার যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় । ফলে সত্যবাদিতা জীবনকে সার্থক করার একটি চমৎকার পন্থা ও মানবচরিত্রের উজ্জ্বল অলঙ্কার । তাই যুগে যুগে তার সাধনা চলছে ।
শ্রেষ্ঠ গুণ :
সত্যবাদিতা মানবজীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। যেসব গুণ জীবনকে সার্থক ও বিশিষ্ট করে তোলে তার মধ্যে সত্যবাদিতার স্থান সবার ওপরে। সত্যের অনুসরণে জীবন সুন্দর ও সার্থক হয়। সত্যকে অবলম্বন করলে জীবনে সাফল্য অনিবার্য । সত্যবাদী লোক সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন পান । সবাই তাকে বিশ্বাস করে । প্রত্যেক ধর্মই সত্যকে গ্রহণ ও মিথ্যাকে বর্জন করার আদেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, সকল পাপের উৎস হলো মিথ্যা। কেননা মিথ্যা থেকেই শুরু হয় প্রতারণার জালিয়াতি, শঠতাসহ নানাবিধ কুকর্ম । তাই মিথ্যা বলা মহাপাপ । আর সত্যবাদিতা মানুষের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ ।
সত্যবাদিতার সুফল ও প্রয়োজন :
সত্যবাদীকে সবাই বিশ্বাস করে। সমাজে তাকে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং ভালোবাসে । অপরদিকে মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না । সমাজে তাকে সবাই ঘৃণার চোখে চোখে । সমাজে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত। সত্যবাদিতা থেকে বিচ্যুত হলে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটে ফলে সমাজজীবনে অবৈধ কার্যকলাপ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং মানুষের মহৎ গুণাবলির তিরোধান ঘটে ।
মানুষ তখন নানা অন্যায় কাজে লিপ্ত হয় । সমাজে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলতা। দেশে নানা অশান্তির সৃষ্টি হয় । ফলে ব্যাপক আকারে অন্যায় অনাচার সমাজে প্রবেশ করে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় । সত্যের পথ আলোর পথ। সত্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে মানব সমাজ । সততা দিয়ে শত্রুর মনও জয় করা যায় ।
আমৃত্যু সত্যের সাধক শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (স.) তার উজ্জ্বল উদাহরণ । সত্যের মধ্য দিয়েই তিনি তার পরম শত্রুর মনও জয় করতে পেরেছিলেন। শত্রু-মিত্র সবাই তাকে বিশ্বাস করে 'আল আমিন' বা ‘বিশ্বাসী' বলে ভূষিত করেছিল । তার কথায় ও কাজে আস্থা এনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল । তাই ধর্মবোধসম্পন্ন আদর্শ জীবনযাপনের জন্য সততা ও সত্যবাদিতা অপরিহার্য ।
বাস্তব অবস্থা :
সততা ও সত্যবাদিতা বাস্তব জীবনের একটি মহত্তর দিক হলেও বাস্তব জীবনে বিশেষত দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তা যথার্থ মর্যাদা লাভ করতে পারছে না । সততা পরিহার করে মানুষ সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে । ফলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিকেই তারা প্রাধান্য দিয়ে নানা রকমের অত্যাচার, অনাচার ও দুর্নীতি করে চলেছে। অসততার প্রতি মানুষের তেমন প্রতিবাদ বা বিরূপতা দেখা যাচ্ছে না । সততা বিসর্জন দিয়ে মানুষ এখন নিজের স্বার্থে তৎপর । অন্যায় বা অবৈধ পথ অনুসরণ করায় এখন সমাজে এসেছে অবক্ষয় । তাই আমাদের উচিত সৎ পথ অবলম্বন করা ও সত্যবাদিতার চর্চা করা ।
কর্তব্য :
জীবনকে অবশ্যই
সত্যবাদিতার মাধুর্যে মণ্ডিত করতে হবে । অন্যায়ের মাধ্যমে বা অবৈধ উপায়ে যতই বিত্তশালী
হই না -কেন তা যে পাপের পথ তাতে কোনো সন্দেহ নেই । অসত্যের পরাজয় আসবেই ও ন্যায়ের
পথ চির উজ্জ্বল থাকবেই।
প্রভাব :
মহামানবগণ সত্যের অনুসরণে তাদের জীবনের মহান সাধনাকে সফল করেছেন। সত্যবাদিতার জন্য যেমন তারা লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যলাভ করেছেন, তেমনি সত্যের বলে বলীয়ান হয়ে তারা প্রবল শত্রুকে পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন । সত্যের সাধনায় মহাপুরুষগণ জীবনকে যেভাবে গৌরবান্বিত করে গেছেন তা মানুষের কাছে মহান আদর্শ হিসেবে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দেয় ।
সততা অর্জনের উপায় :
সৎ আদর্শ সমুন্নত রেখে যেন সারাজীবন চলতে পারে- এই শিক্ষা শিক্ষক দান করবেন। তৃতীয়ত, ব্যক্তি নিজেকে সৎ করে গড়ে তুলতে পারবেন যদি তিনি পৃথিবীর মহামানবদের জীবনাদর্শের যথাযথ অনুসরণ করেন । মানুষ যেন ত্যাগী হন, নির্মোহ হন, পরোপকারী হন এবং সততা পরিপন্থি কাজের জন্য তিরস্কৃত এবং সৎ কাজের জন্য পুরস্কৃত হন সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
উপসংহার :
সত্যকে যারা
মর্যাদা দেয় না তারা উদার হতে পারে না, তাদের মনে চিরদিন ভয় বিরাজ করে । সত্যবাদিতার
মহৎ গুণের অভাবে মানুষের সব সময়ের জন্য ছোট হয়ে থাকে । অন্যদিকে, সত্যবাদী মানুষ
নির্ভীক হয়, দুর্বার সাহস তার মনে বাসা বাঁধে । সে জন্য সত্যের পথ দৃঢ়তার আঁকড়ে
থাকতে হবে ।