বাংলা প্রবন্ধ রচনা : মোবাইল ফোন - by Composition
মোবাইল ফোন
বাংলা প্রবন্ধ রচনা |
ভূমিকা :
আধুনিক
যুগ বিজ্ঞানের যুগ। মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক
তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। বিজ্ঞান তার বিস্ময়কর আবিষ্কারের দ্বারা মানুষের জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দে ভরে দিয়েছে। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দের একটি নতুন ও বিস্ময়কর সংযোজন
হলো মোবাইল ফোন। দিন দিন অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে এর প্রয়োগের ক্ষেত্র
ও প্রয়োজনীয়তা। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের প্রভাব এতোটাই বেশি যে, একে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবন যেন অচল, নিঃস্তব্ধ ।
মোবাইল ফোনের ইতিহাস :
সর্বপ্রথম
বিজ্ঞানী আলেকজাণ্ডার গ্রাহাম বেল দূরে অবস্থিত মানুষের সঙ্গে বার্তা বা কথা পৌঁছাতে
সক্ষম হন। এরপর মারকনি ওই প্রযুক্তিকে আরও
এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান। আলেকজান্ডার ও টেলিফোনের ব্যবহার
শুরু হয় । যার আকার
ছিল একটি সাইজের সুটকেসের সমান এবং ওজন ছিল ৪০ কেজিরও বেশি।
কিন্তু নানারকম সমস্যার কারণে এর ব্যবহারিক উপযোগিতা
ছিল খুবই কম। পরবর্তী সময়ে এর ক্রম আধুনিকায়ন
করা হলে উপযোগিতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমান মোবাইল ফোনে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, গ্লোবাল রোমিং, মাল্টিমিডিয়াসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
মোবাইল ফোনের কার্যপ্রণালী :
মোবাইল
ফোন সিস্টেম একটি শহররে ছোট ছোট সেল -এ ভাগ করা
হয় । যার ফলে
শহরের মন ব্যবহার করা
হয়। আর এর ফলেই
একই সময়ে একই শহরে লক্ষ লক্ষ লোক সেল ফোনে কথা বলতে পারে। প্রতিটি নেল- এ একটি রিলে
স্টেশন থাকে যাতে একটি টাওয়ার ও ছোট বিল্ডিং
থেকে রেডিও ইকুইপমেন্টসহ সেল লোন ও বিসে উভয়েই
গো পাওয়ারে সিগন্যাল আদান-প্রদান করে। প্রতিটি সেল ১০ বর্গমাইল বা
তারও কম-বেশি হতে
পরে প্রতিটি শহর একটি কেন্দ্রীয় অফিস এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
হয়, যাকে বলে মোবাইল টেলিফোন সুইচিং অফিস ।
বাংলাদেশে প্রচলিত মোবাইল কোম্পানিসমূহ:
বাংলাদেশ
মোবাইল ফোনের বিস্ময়কর অগ্রগতী সাধিত হয়েছে। এ দেশের প্রায়
তিন কোটি লোক মোবাইল ফোন নিয়মিত এবং স্বল্প সংখ্যক অনিয়মিতভাবে ব্যবহার করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ছয়টি মোবাইল কোম্পানি রয়েছে । এগুলো হলো-
গ্রামীণ, বাংলা লিংক, একটেল, সিটিসেল, ওয়ারিদ এবং টেলিটক বাংলাদেশি মোবাইল ফোনের কার্যকারিতা ও রেডিয়েশন: মোবাইল
ফোনকে একটি টু-ওয়ে ট্রান্সমিটার
বলা চলে, যা তথ্য গ্রহণ
ও প্রদান করতে পারে। মোবাইল ফোনে যখন কোনো তথ্য পাঠানো হয় তখন তা থেকে ওয়েব
এর মাধ্যমে নিকটবর্তী কোনো স্টেশন গ্রহণ করে নির্দিষ্ট মাত্রায় পুনরায় তা ছেড়ে দেয়।
আমাদের দেশে সাধারণত ৮০০-৯০০ মেঘাহার্টস এর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার
করা হয়। গ্রামীণ, একটেল, বাংলালিংক ৯০০ মেগাহার্টস এবং সিটিসেল ব্যবহার করছে ৮০০ মেঘাহাসে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মোবাইল :
মোবাইল ফোন
যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ বিস্ময়কর অগ্রগতী সাধন করেছে। সমগ্র বিশ্বকে হাতের মুঠোয় বন্দি
করে দিয়েছে এই মোবাইল ফোন । মুষ্টিবদ্ধ মোবাইলটির কাছে কান পাতলে মুহূর্তেই বিশ্বের
এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন ভাবের আদান-প্রদান ঘটে। তারবিহীন ও সহজেই
বহন করা যায় বলে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী । অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা কর্মযজ্ঞে
তো বটেই, ভ্রমণ-বিলাসে, রেস্তোরায়, খাবার টেবিলে, যানবাহনে- এমনকি পাহাড়-পর্বত, বনবনানীতে
সর্বত্র এর সহজ পরিবহন ও ব্যবহার বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নদীর প্রবাহের মতো সহজ
করে দিয়েছে। সাড়া বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ক্ষুদ্র একটি সেটের মধ্যে বন্দি করে
ফেলেছে। এর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আর কী হতে পারে? বিপদে-আপদে, আনন্দ-বেদনায়, হর্ষ-বিষাদে,
জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল এখন প্রতিটি মানুষের নিত্যসঙ্গী ।
তাৎক্ষণিক
যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে মোবাইলের বিকল্প এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু
করে দিনমজুর পর্যন্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহারে কোনো ভেদাভেদ নেই। আর একই সঙ্গে পাল্লা
দিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোও বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করছে । মোবাইলে শুধু কথাই হয়
না, এসএমএস এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংবাদ মুহূর্তেই পৌছিয়ে দিতে পারে। প্রিয়জনের সাফল্যে
অভিনন্দন প্রেরণ এবং নিজের সুসংবাদ কিংবা দুঃসংবাদ, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, উৎসবে আমন্ত্রণ-নিয়ন্ত্রণ
মোবাইল যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। ইদানিং মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা,
সংবাদ প্রেরণ ছাড়াও বিভিন্ন সেবা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে
বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের খবর সহজে পাওয়া যায় এবং ঘরে বসে যে কারোর সঙ্গে অনায়াসে
যোগাযোগ করা যায় । ইন্টারনেট ব্রাউজিং -এর মাধ্যমে যে কোনো সময় যে কোনো তথ্য পেতে
পারে মোবাইলের সাহায্যে ।
যোগাযোগের
ক্ষেত্রে মোবাইল যেন যাদুর কাঠি। যার স্পর্শে হাজার রকমের ভাবের লেনদেন যেমন সম্ভব,
তেমনি নানারকম নিত্য প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড সহজেই নিষ্পন্ন করা সম্ভব । গান-বাজনা,
সিনেমা দেখা ইত্যাদি বিনোদনমূলক কাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার সত্যিই বিস্ময়কর । স্মৃতিকে
ধরে রাখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা। আজকাল মোবাইলের মাধ্যমে
বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিলসহ অন্যান্য কাজ সহজেই করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো
জাতীয় দিবসের প্রতিপাদ্য এবং সরকারের আদেশ খবর গ্রহণের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা
করছে। মোবাইলের কথা বলার স্থান নির্বাচন করে এবং কথাবার্তার গতিপরিধি নির্ণয় করে আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করছে । মোট কথা মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব
উন্নতি সাধন করেছে ।
মোবাইলের ক্ষতিকারক দিক :
মোবাইল যোগাযোগ
ব্যবস্থাকে সস্তা ও সহজসাধ্য করলেও এর কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই,
সন্ত্রাস প্রভৃতি অসামাজিক কার্যকলাপে মোবাইল ফোন সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোবাইলের
মাধ্যমে সহজেই সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারি চক্রের দ্বারা নাশকতামূলক কার্যক্রম সংঘটিত হতে
পারে । মোবাইলের নেটওয়ার্কের কারণে অগ্রিম সংবাদ পেয়ে দুষ্কৃতিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। মোবাইলের মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারিরা হুমকি প্রদান
করে কারো কারো মনে ভীতি সঞ্চারও করে থাকে । মোবাইল ফোনের কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে ।
মোবাইল
ফোনের রেডিয়েশন মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এর রেডিয়েশন মানুষের
দেহে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ব্রেন টিউমারের মতো কঠিন রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এছাড়া নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত করে, চোখের ক্যাটরেখ, রক্তের উপাদানগত পরিবর্তনেও রেডিয়েশন প্রভাব ফেলতে পারে । মোবাইলের রিংটোন
হার্টের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর। আজকাল যন্ত্রের ওপর নির্ভর করেই যেন আমাদের নিত্য দিনের পথ চলা। যন্ত্রের
সঙ্গে আমরাও হয়ে পড়েছি যান্ত্রিক । যন্ত্র আর
যান্ত্রিকতার সঙ্গে দৌড়ে আমরা যেন ক্রমেই হাঁপিয়ে উঠছি। অস্ফুটভাবে বলছি- আর নয়, আর
পারি না, ফিরে যাব প্রকৃতির কোলে ।
যান্ত্রিকতা
মানুষকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আরাম দিয়েছে বটে, কিন্তু জীবনকে করেছে আবেগশূন্য । জীবনের এই
আবেগরিক্ততা মনুষ্যত্বকেও অনেকখানি নিঃস্ব করে দিয়েছে। মানুষ যেন আর কথা বলতেও
নারাজ- আবিষ্কার করেছে রোবট! আজকের দিনে এমন রোবটও আবিষ্কৃত হয়েছে যে কিনা মানুষকে
দেবে সঙ্গ! আর সবুজ তমাল
পৃথিবীকেও ছেড়ে যেতে দ্বিধা নেই তার, সে পাড়ি দিতে
চায় মঙ্গল গ্রহে কিংবা ভিন্নতর কোনো গ্রহে! সে খুঁজছে নতুন
গ্রহ! এ কেবলই আবিষ্কারের
নেশা বই কি!
উপসংহার :
মোবাইলের কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও এর উপকারের দিকই বেশি । বিশেষত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এর রয়েছে যুগান্তকারী ভূমিকা। মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের সামাজিকতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি মানুষের দায়িত্বও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে । মোবাইলের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুখে-স্বাচ্ছন্দে ভরে তুলতে পারি, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।