বাংলা প্রবন্ধ রচনা : কর্মমুখী শিক্ষা - by Composition

বাংলা প্রবন্ধ রচনা : কর্মমুখী শিক্ষা - by Composition

কর্মমুখী শিক্ষা বাংলা প্রবন্ধ রচনা


আরো পড়ুন :- 

 বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা

বাংলা প্রবন্ধ রচনা : সংবাদপত্র


ভূমিকা :

শিক্ষা মানুষের মধ্যে সুপ্ত মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আবার, উপযুক্ত শিক্ষাই কোনজাতি বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলে এবং তার ক্রমোন্নতির অপরিহার্য সহায়ক হয়ে ওঠে। কোনো ব্যক্তির নিজস্ব প্রবণতা, তার অন্তর্নিহিত গুণাবলির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যদি তাকে উপযুক্ত শিক্ষা না দেওয়া হয়, তবে সে রাষ্ট্রগঠনের সহায়ক না হয়ে রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে পড়ে। প্রত্যেকের জন্য একই ধরনের শিক্ষা তাই কখনো উপযুক্ত হতে পারে না। সমাজের চাহিদা এবং ব্যক্তির ক্ষমতা মিলে শিক্ষাকে বহুমুখী করে তুলতে হবে। সে রকম শিক্ষাই হলো কর্মমুখী শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :

শিক্ষাকে কেবল আত্মিক উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, সামাজিক প্রয়োজনের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান বিশ্বে কর্মের যে মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে আমাদেরকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। কৃষিকাজ, কামারের কাজ, কুমারের কাজ, ছুতোরের কাজ, চামড়ার কাজ, বাঁশ বেতের কাজ, প্লাস্টিকের কাজ, তাঁতের কাজ, ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ, রেডিও-টেলিভিশন মেরামতের কাজ ছাড়াও আরও অনেক বৃত্তিমূলক কাজ রয়েছে।

এসব কাজ শারীরিক যোগ্যতা থাকার পরও যদি আমরা করতে কুণ্ঠিত হই, তাহলে আমাদের শিক্ষাই যে কেবল নিরর্থক হবে তা নয়, আমাদের দারিদ্র্য কোনো কালেই ঘুচবে না। তাই কর্মমুখী শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে এদিকে এগিয়ে আসে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে দেশ জোড়া যে বেকার সমস্যা বিরাজমান, তাও অনেকাংশে কমে আসবে। দেশ এগিয়ে যাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা :

যুগের সাথে সাথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয় নি। যদিও শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে 'স্যাডলার কমিশন', 'কুদরত--খুদা শিক্ষা কমিশন', 'বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন', 'কাজী জাফর/বাতেন কমিশন' এবং 'মজিদ খানের শিক্ষানীতি' ইত্যাদি কমিশন গঠন করা হয়. কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয় নি। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে শুধু ডিগ্রি দেয় কিন্তু চাকরি বা কাজ দেয় না। তাই বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত তরুণ যুবসমাজ আজ দিশেহারা। তারা আজ অন্যের হাতের ক্রীড়নক। বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত যুবসমাজ আজ অভিশপ্ত জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা :

বিশ্বের উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, তাদের পরিকল্পিত এবং কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার বাস্তব কর্মকাণ্ড। উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় কেরানি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আছে বিজ্ঞানী হওয়ার এবং কর্মের মন্ত্রে দীক্ষা নেওয়ার ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ উৎপাদনমুখী বা কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে প্রসন্ন করেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে তারা আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে।

কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্ব :

যে শিক্ষা অর্জন করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায় এবং যার মাধ্যমে সহজে জীবিকা নির্বাহ করা যায় তাই হলো কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা। কর্মমুখী শিক্ষা লাভ করলে পরমুখাপেক্ষী হতে হয় না, বেকার থাকতে হয় না; বরং ধরনের শিক্ষা কর্মপ্রেরণা যোগায় এবং নিজের অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে দেশ জনগণের সেবা করা যায়। একথা ঠিক যে, অদক্ষ শ্রমিক ক্রমে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তাত্ত্বিক ব্যবহারিক শিক্ষা পেলে তারা রাষ্ট্রের এবং সমাজের অধিকতর প্রয়োজন সুসম্পন্ন করতে পারে। জন্যই সকল প্রকার বৃত্তি গ্রহণের জন্য উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করা দরকার।

আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার সম্ভাবনা :

কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে আমাদের দেশে। কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণে কৃষিকাজে, কলকারখানায় কাজ পেতে সুবিধা হয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। উচ্চতর প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা অর্থাৎ, ভাষা, গণিত, সমাজ সাধারণ বিজ্ঞান শিক্ষা প্রচলিত থাকবে এবং তারপর উপযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা উচ্চতর শিক্ষার উপযুক্ত ছাত্রদের বাছাই করে নিতে হবে। অবশিষ্টরা নিজ নিজ প্রবণতা অন্তর্নিহিত গুণানুযায়ী বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষায় নিযুক্ত হবে। এভাবে মাধ্যমিক স্তর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শেষেও বাছাই এবং অবশিষ্টদের গুণ প্রয়োজন অনুসারে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজ রাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী এভাবে সকল ক্ষেত্রের উপযুক্ত দক্ষ কর্মী পাওয়া যাবে। এতে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করতে পারে।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি :

আমাদের দেশ বিভিন্ন দিক থেকে অনগ্রসর এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কর্মমুখী শিক্ষাকে আমাদের দেশে কোনোরকম গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শিক্ষাকে তুচ্ছ বলে মনে করা হয়। সাধারণত অভিজাত শ্রেণি বা উচ্চ শ্রেণির অনেকে এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাও শিক্ষার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় না। ধরনের মানসিকতা আমাদের সমাজ থেকে দূর করে কর্মমুখী শিক্ষায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে বৃত্তিমূলক কর্মমুখী শিক্ষা যে বেশি উপকারী এই চেতনা সৃষ্টি করতে না পারলে আমাদের ব্যক্তি বা জাতীয় জীবনে উন্নতি অগ্রগতি সম্ভব নয়। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা বা অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে মানুষের মধ্যে এই চেতনাবোধ সৃষ্টি করতে হবে।

কর্মমুখী শিক্ষার উপকারিতা :

কর্মমুখী শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে নানারকম সমস্যা থাকলেও এর উপকারিতাকে অস্বীকার করা যায় না। কর্মমুখী শিক্ষার নানারকম উপকারিতা রয়েছে;  যেমন :

  •   শিক্ষা অর্জন করলে বেকারত্বের অভিশাপ হ্রাস পাবে,
  •  সহজে কাজ পাওয়া যায়,
  • উপার্জনশীল হওয়া যায়,
  • ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে,
  • সাধারণ শিক্ষার ওপর চাপ কমে আসবে,
  •  স্বাবলম্বী বা স্বনির্ভর হওয়া যায়,
  • জীবনের হতাশা, শূন্যতাবোধ এবং ব্যর্থতাজনিত গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়া যায়,
  • নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় ইত্যাদি

উপসংহার :

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, প্রতিযোগিতার যুগ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার সময়। তাই আমাদের উচিত আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে, নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয় জীবনেও অবদান রাখার সংকল্প করা। শুধুমাত্র স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে যুগে লাভ নেই। এখন নানানপ্রকার বৃত্তিতে আত্মনির্ভরতার চাবিকাঠি লুকানো আছে। সুতরাং কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের উচিত সাধারণ শিক্ষার দিকে ঝাঁপিয়ে না পড়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তোলা তাহলে একদিকে যেমন নিজের উন্নতি নিশ্চিত হতে পারে, তেমনি হতে পারে দেশের কল্যাণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url