বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা - By Composition.

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা প্রবন্ধ রচনা



ভূমিকা:

বেকার সমস্যা আমাদের জাতীয় জীবনের একটা অতি জটিল  গুরুতর সমস্যা। অগণিত কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন থাকার কারণে আমাদের আর্থিক সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এর ফলে আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে।কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেওযান্ত্রিক সভ্যতার যুগে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা মোটেই উন্নত নয়।দেশের শিল্পব্যবস্থা খুবই অনুন্নত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেরও তেমন প্রসার ঘটেনি।এদেশের শিল্প বিদেশের অত্যাধুনিক যন্ত্রোৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্রমশ ধ্বংস হতে চলেছে। এর ফলে শিল্পকারখানাগুলো দিন দিন শোচনীয় অবস্থায় পতিত হচ্ছে।এমতাবস্থায় দেশে বেকারের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে বেকারত্বের বর্তমান অবস্থা:

দেশে বর্তমানে ২৬ লাখের ওপর শিক্ষিত বেকার রয়েছে।পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ মতেবাংলাদেশে বেকারের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। এর কারণ বাংলাদেশে কর্মঘাটতি থাকা এবং পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করতে না পারা। তাছাড়া সামাজিক কারণেও উচ্চশিক্ষিত লোক নিম্নমানের কাজে অংশ নেওয়ার আগ্রহ হারায়। অল্প শিক্ষিত লোকের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম।বিশ্বের প্রায় দেশেই বেকারত্বের অভিশাপ থাকলেও বাংলাদেশে এর সংখ্যা সর্বাধিক।বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সংখ্যা বাড়ছে বেকারত্বের কারণে।বেকার সংখ্যার লাগাম ধরতে না পারলে ভবিষ্যতে দেশের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে।

বেকারত্বের বিভিন্ন রূপ:

বেকার সমস্যা আমাদের জাতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছেঅক্টোপাসের মতো আমাদের গ্রাস করতে উদ্যত  হচ্ছে।আমাদের যুবসমাজের বেকারত্ব দু'ভাবে সমস্যা সৃষ্টি করছে-

ব্যক্তিগত সমস্যা  

সামাজিক সমস্যা।

ব্যক্তিগত ক্ষতির দিক হলোবেকারত্ব ব্যক্তিগত জীবনে হতাশা  দুঃখ বয়ে আনেবেকাররা নিজেদেরকে অভিশপ্ত মনে করেপরিবারে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ইত্যাদি।সামাজিক সমস্যাও ব্যক্তিগত সমস্যা থেকেই সৃষ্টি হয়তবে শিক্ষিত মানুষের বেকারত্বের জন্যে অনেকটাই সমাজ দায়ীশিক্ষিত বেকার বেকারত্ব নিরসনে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ কিংবা মৎস্য চাষে উদ্যোগী হলে আমাদের সংকীর্ণ সমাজ সমালোচনায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে।ফলে শিক্ষিত বেকার কর্মের অনুসন্ধান পেলেও সামাজিক কারণেই বেকারত্বের অভিশাপে আত্মাহুতি দেয়। বেকারত্বের কারণে তখন সে অবৈধ  বেআইনি পথে পা বাড়ায়।এভাবে ব্যক্তি কর্মহীন থাকার ফলে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হয় 

বেকার সমস্যার জটিলতা:

বহুল আলোচিত  বেকার সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে কর্মহীন মধ্যবিত্তশিক্ষিত  শ্রমিক সম্প্রদায়।জনসংখ্যার সিংহভাগ অর্থাৎ কৃষিকাজের সাথে জড়িত মানুষেরা বছরের কিছু সময় কাজ করে এবং বছরের বাকি সময়টুকু অলস জীবনযাপন করে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি কর্মহীন হয়ে রয়েছে। শুধু চাকরির মাধ্যমে  জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বেকার সমস্যা শুধু আমাদের দেশেরই সমস্যা নয়। বিশ্বের প্রায় দেশেই  সমস্যা কমবেশি বিদ্যমান।

বেকার সমস্যার জটিলতা:

বহুল আলোচিত  বেকার সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে কর্মহীন মধ্যবিত্তশিক্ষিত  শ্রমিক সম্প্রদায়।জনসংখ্যার সিংহভাগ অর্থাৎ কৃষিকাজের সাথে জড়িত মানুষেরা বছরের কিছু সময় কাজ করে এবং বছরের বাকি সময়টুকু অলস জীবনযাপন করে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি কর্মহীন হয়ে রয়েছে।শুধু চাকরির মাধ্যমে  জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।বেকার সমস্যা শুধু আমাদের দেশেরই সমস্যা নয়। বিশ্বের প্রায় দেশেই  সমস্যা কমবেশি বিদ্যমান।

বেকার সমস্যা সৃষ্টির কারণ:

বিগত অর্ধশতাব্দীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সময়ে আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে ব্যাপকহারে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সে হারে উন্নতি সাধিত হয়নি। অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা বেকার সমস্যাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে। বেকারত্ব সৃষ্টির উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

প্রথমত আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও কৃষিব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। দেশের কৃষি ব্যবস্থায় শতকরা ৮৫ জন নাগরিক সরাসরি জড়িত। বছরের নির্দিষ্ট সময় কৃষিকাজে অংশ নেওয়ার পর বাকি সময়ে তাদের অধিকাংশ বেকার হয়ে পড়ে। বিকল্প কাজ না থাকায় তাদেরকে অলস সময় কাটাতে হয়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারছে না।  কারণে বেকার সমস্যার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত ব্যবসা-বাণিজ্যে বিমুখতাও বেকার সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। যুগের প্রেক্ষাপটেই ব্যবসা-বাণিজ্যে আত্মনিয়োগ না করে সরকারি চাকরির সন্ধানে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ায় ডিগ্রিধারী শিক্ষিত যুবকেরা। চাকরির আকাঙ্ক্ষা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিমুখতা বেকার সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলছে।

তৃতীয়ত : অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেকার সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলছে। যন্ত্রে সহায়তায় পাঁচ জনের কাজ বর্তমানে একজনকে দিয়েই করাতে পারে বলে শিল্প-কারখানায় দিনদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীশ্রমিক ছাটাই হচ্ছে। ফলে দেশে ক্রমশ বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চতুর্থত : বর্তমান যুগে কারিগরি জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অধিকাংশ জনগণের কারিগরি জ্ঞান না থাকার কারণে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে

বেকার সমস্যার সমাধান :

বেকার সমস্যা এতই জটিল যেএর সমাধান খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য। এটা সমাধানের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ছে।

কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন :  এদেশের বেশিরভাগ লোক সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষিব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। শিক্ষিত কর্মহীন লোকদের কৃষির প্রতি মনোযোগী করতে হবে। শিক্ষিত যুবকেরা কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করলেকৃষিব্যবস্থায় অভূতপূর্ব সাফল্য আসবে। এজন্যে মান্ধাতার আমলের কৃষি উপকরণের পরিবর্তে আধুনিক কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। কৃষিব্যবস্থার উন্নতি ঘটলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে এবং বেকার সমস্যা হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা  কারিগরি শিক্ষার প্রচলন : দেশে বেকার সমস্যা সমাধানের জন্যে দ্রুত শিল্পায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব শিল্প-কারখানায় কাজের উপযুক্ত জনশক্তি দরকার  তাই কল-কারখানায় শ্রমের উপযোগী করে যুবসমাজকে বৃত্তিমূলক  কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।

কুটিরশিল্পের পুনরুদ্ধার  ক্ষুদ্রায়তন শিল্পের প্রতিষ্ঠা : দেশের কুটিরশিল্পের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করে  ক্ষুদ্রায়তন শিল্পের প্রতিষ্ঠা করে বেকার সমস্যার সমাধান করতে হবে। এতে বেকার জনগোষ্ঠীর অর্থ উপার্জনের পথ প্রশস্ত হবে। যুব সমাজকে কুটিরশিল্প  ক্ষুদ্র শিল্প বিষয়ক শিক্ষাদান করতে হবে।

চাকরির মোহ ত্যাগ : আমাদের জনগণ একটু শিক্ষিত হলেই চাকরি ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে চায় না। কায়িক শ্রমকে তারা অপমানজনক মনে করায় বেকার সমস্যার সমাধান হয় না। যুবক সমাজকে  ধরনের মনোভাব ত্যাগ করে ছোট-বড় সব ধরনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো কাজকে হেয় করা চলবে না।  ছাড়া শিল্প  ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।

ঙ .আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা : বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষিত  অশিক্ষিত বেকার স্বাবলম্বী হবার সুযোগ খুঁজে পাবে। এজন্যে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বেকার  শিক্ষিত বেকারদের কৃষিকারিগরিমৎস্য চাষের যথাযথ প্রশিক্ষণ দান করে। দীর্ঘমেয়াদি  স্বল্পমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করে আত্মকর্মসংস্থানের জন্যে উপযুক্ত করে তৈরি করা যেতে পারে।

উপসংহার:

বেকার সমস্যার সমাধান করতে হলে সরকারি  বেসরকারি উভয় পর্যায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় বেকার সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করছে। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্যে আমাদের শিক্ষিত যুব সমাজকে কোনো কাজকে হেয় না করে সকল কাজে এগিয়ে আসতে হবে এবং গ্রামমুখী হতে হবে। কৃষিকাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। জনসংখ্যা স্ফীতি রোধ করে এবং কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url