বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার রচনা - By Composition.


বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা


ভূমিকা

 বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পথে যেসব সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জনসংখ্যা সমস্যা। একটি দেশে জনসংখ্যা জনশক্তি হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্র গঠনের আবশ্যকীয় উপাদানও জনসংখ্যা। কিন্তু জনসংখ্যা যখন শক্তির বদলে সমস্যায় পরিণত হয় তখন দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের গতি হয়ে পড়ে মন্থর। বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নও অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে বিপর্যস্ত। সীমিত ভূ-খণ্ডে এক বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ।

বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রকৃতি :

 ,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশে প্রায় ১৭ কোটি লোকের বাস। এদের মধ্যে পনেরো বছরের কম এবং ষাট বছরের বেশি বয়সের লোকের সংখ্যা অধিক জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ নিরক্ষর, এরা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। সব মিলিয়ে দেশে কর্মহীন লোকের সংখ্যাই বেশি। ফলে জনসংখ্যা সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ :

অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল স্থির। কেননা সে সময় জন্মহার মৃত্যুহার দুই- ছিল বেশি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে ধীর গতিতে। শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার কমে যেতে থাকে। অর্থনীতিবিদ ম্যালথাস দেখিয়েছেন, পৃথিবীতে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সম্পদের পরিমাণ সে হারে বাড়ছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে খাদ্য ঘাটতি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ম্যালথাসের তত্ত্ব বিশেষভাবে প্রযোজ্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূলে প্রধান যে কারণগুলো রয়েছে তা হলো : জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ, সামাজিক কুসংস্কার, নিম্নমানের জীবনযাত্রা দারিদ্রা প্রভৃতি।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল :

ম্যালথাসের তত্ত্ব অনুযায়ী, জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়। একসময় প্রকৃতিই এর প্রতিশোধ নেয়। যুদ্ধ, মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতির মাধ্যমে জনসংখ্যা হ্রাস পায়, ফিরে আসে ভারসাম্য। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যে ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয় তার সুস্পষ্ট প্রকাশ ধনী-দরিদ্রের ব্যাপক ব্যবধান। বাংলাদেশে জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধর্মীয়ভাবে গৌড়াএদের মধ্যেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা বেশি। এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রধানত যে ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হলো :

  • প্রতিবছর ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। খাদ্যের ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছর দশ থেকে পনেরো লক্ষ টন খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। খাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে না।
  • বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নের গতি মন্থর। তাই কৃষি-বহির্ভূত খাতগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। দেশে কর্মক্ষম লোক রয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ নেই। ফলে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে এবং অপরাধ-প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • বাসস্থান সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কমে আসছে চাষের জমির পরিমাণ। কাজা বসবাসের আশায় নিম্ন আয়ের লোক গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছে। ফলে শহরে বস্তিবাসীর ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
  • জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেড়ে চলেছে নিরক্ষর লোকের সংখ্যা।
  • খাদ্য পুষ্টির অভাবে দরিদ্র জনসাধারণ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির শিকার হচ্ছে।
  • বর্ধিত জনসংখ্যার চাপে কৃষিজমি ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সন্ধ্যায় পুঁজি গঠনের হারও অনেক কমে গেছে।
  • জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি পরিবেশের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধন, পয়ঃনিষ্কাশনে অব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির সংকট, মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় :

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন বাস্তবমুখী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। লক্ষ্যে _

. অশিক্ষিত নিরক্ষর জনগণকে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে। শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজ থেকে ধর্মীয় গোঁড়ামি কুসংস্কার দূর করতে হবে। গণসচেতনতা তৈরির জন্য জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলোও ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

. শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি দক্ষতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব হলে জনসংখ্যাকে শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব।

৩. বাংলাদেশে দৃষ্টিমের লোকের হাতে প্রচুর সম্পদ। অন্যদিকে, ব্যাপক জনগোষ্ঠী সম্পদহীন। আয়ের অসম বণ্টন নিরসনে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করতে হবে

৪. বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ রোধে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে

৫. সর্বোপরি বর্ধিত জনসংখ্যার মৌলিক গুণগত উৎকষ সাধনের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার :

বাংলাদেশের বিপন্ন অর্থনীতিকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। এর জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা নব্বই ভাগই ঘটে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর জনগণকে সচেতন করে তুলতে প্রতিবছর ১১ জুলাই পালিত হয় "বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস' উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও বিপুল জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত। সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে একটি সূখী সমৃদ্ধিশালী দেশ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url