বাংলা প্রবন্ধ রচনা : সংবাদপত্র - by Composition

সংবাদপত্র বাংলা প্রবন্ধ রচনা



ভূমিকা :

ফোর্থ এস্টেট' নামে পরিচিত সংবাদপত্র হলো সারা বিশ্বের একটা দর্পণস্বরূপ। যে পত্র পত্রিকা মানুষের জন্য নানা প্রকার সংবাদ বহন করে, তাকে আমরা সাধারণত সংবাদপত্র বলি। আধুনিক সভ্যতায় শ্রেষ্ঠ বাহন সংবাদপত্র। সংবাদপত্র সমস্ত বিশ্বের নতুন নতুন খবর নিয়ে প্রতিদিন সকালে আমাদের দ্বারে হাজির হয়। সংবাদপত্র না হলে আজকাল শিক্ষিত সমাজে সকাল বেলার চা-নাস্তাই জমে ওঠে না। অতি অল্প পয়সায় এর মত প্রয়োজনীয় মূল্যবান বস্তু দ্বিতীয়টি আর নেই এর সম্পর্কে সঙ্গত কারণেই বলা হয়-

"Newspaper is the store house of knowledge."

আধুনিককালে এটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশে দর্পণ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বহু দল মতের ধারক-বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার জনগণের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধন।

সংবাদপত্রের প্রচলন :

সংবাদপত্রের প্রচলন প্রথম কোন দেশে হয়েছিল তা আজও যায়নি। তবে অনুমান করা হয়, কাগজ আবিষ্কারের পর একাদশ শতাব্দীতে চিনদেশে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয়। ভারতে মুঘল শাসনামলে হাতে লেখা সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল। ইউরোপে প্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয় ডেনিসে। তারপর ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথের সময় 'গেজেট' নামক একটি পত্রিকা বের হয়। বাংলাদেশে 'সমাচার দর্পণ' নামে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশ করেন শ্রীরামপুরের মিশনারিগণ

সংবাদপত্রের প্রকারভেদ :

সংবাদপত্রের নানা প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি তবে শেষোক্ত সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে সংবাদের চেয়ে গল্প, প্রবন্ধ, সমালোচনা, বৈজ্ঞানিক আলোচনা ইত্যাদি বেশ থাকে।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র :

বাংলাদেশের দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক নয়া দিগন্ত, যায় যায় দিন, বাংলাদেশ অজারভার, ডেইলি স্টার, মর্নিং নিউজ, নিউ এজ ইত্যাদি দৈনিক পত্রিকা এবং বিচিত্রা, আনন্দ আলো, বেগম, রোববার ইত্যাদি সাপ্তাহিক পত্রিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য

সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ:

সংবাদপত্রে খবর সংগ্রহ করার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়টার। এছাড়া রয়েছে পিটিআই, ইউএনআই, এএফপি, এপি, বিসিসি, সিএনএন, মিডিয়া সিন্ডিকেট, নিউজ মিডিয়া, আবাস এবং অতি সম্প্রতি আবির্ভূত অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। সোভিয়েতের সংবাদ সংস্থার নাম 'তাস' বাংলাদেশে 'বাসস' 'এনা' নামে দুটো সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান আছে

সংবাদ সংগ্রহ :

বিশেষ বিশেষ বার্তা সংস্থা সংবাদ সংগ্রহ করে সংবাদপত্রের জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। টেলিপ্রিন্টার সাহায্যে পত্রিকা অফিসে সংবাদ গ্রহণ করা হয়। সাম্প্রতিককালে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্যে আরও উন্নত ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে যোগাযোগের যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে তাতে খুব সহজেই মুহূর্তকালের মধ্যে সারা বিশ্বের খবর সংবাদপত্রে অফিসে পৌঁছে থাকে। বিশ্বজুড়ে তথ্য প্রবাহের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা সংবাদপত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে সংবাদ সংগ্রহের জন্যে রিপোর্টারের ভূমিকাটিই মুখ্য। প্রত্যেক সংবাদপত্রের নিজস্ব সংবাদদাতা রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে পত্রিকা অফিসে পাঠায়। সেসব খবর রাতারাতি পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়ে পরের দিন সকালে ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়

সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা :

আধুনিক সভ্যতার যুগে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। সংবাদপত্রের মাধ্যমে আর পৃথিবীর যাবতীয় সংবাদ ঘরে বসে জানতে পারি। সংবাদপত্র আমাদের মনের খোরাক আনন্দ জোগায়। শিক্ষিত সমাজ সংবাদপত্র ছাড়া একদিনও চলতে পারে না রাজনীতি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, খেলাধুলা, বিজ্ঞান, যুদ্ধবিগ্রহ, নতুন তত্ত্ব চিন্তাধারা ইত্যাদি খবর সংবাদপত্রে থাকে। তাছাড়া, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত প্রকাশ জনমত গঠনের প্রধান সহায়ক সংবাদপত্র।

সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ক্ষোভ, হতাশা ইত্যাদির প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবাদপত্র তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। সংবাদপত্র গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। সংবাদপত্র পাঠে সাহিত্যের উন্নতি, শিল্পের অগ্রগতি, বাজার দর, যুদ্ধ বিগ্রহ, খেলাধুলা, আবহাওয়ার খবর ইত্যাদি জানা যায়। এতে নানা ধরনের বিজ্ঞপ্তি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়ামোদী, ব্যবসায়ী সবাই সংবাদপত্র পাঠে উপকৃত হয়। শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে থাকে আলাদা বিভাগ, আলাদা পাতা। আসলে সংবাদপত্র এখন জনজীবনের প্রায় সব দিককেই তার আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে।

সংবাদপত্র বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিপূরক ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পাঠক্রমভিত্তিক এবং পরীক্ষা-নির্ভর সার্টিফিকেট প্রদানের শিক্ষায় শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়ছে। সংবাদপত্র এখন যেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রকেই তার আওতায় এনেছে তার ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠে বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। এতে তাদের জ্ঞানের ক্ষেত্র যেমন সম্প্রসারিত বিকশিত হয় তেমনি বিষয়বিজ্ঞানের পাশাপাশি ভাষাজ্ঞানও বাড়ে। সংবাদপত্রের কল্যাণে বিশাল পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। এছাড়া রাষ্ট্রের বিধিবিধান প্রচারের ক্ষেত্রেও জাতি গঠনের কাজে সংবাদপত্রের অবদান অপরিসীম।

অপকারিতা :

সংবাদপত্র মানুষের শুধু উপকারই করে এমন নয়। এটি কখনও কখনও মিথ্যা, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করে দেশ জনগণের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে থাকে। এছাড়া কতিপয় সংবাদপত্রে ইদানীং এমন সব ছবি ছাপানো হয় যাতে সমাজে নগ্নতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদের ব্যাপারেও সজাগ থাকা দরকার।

জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা :

থাকে জনগণের হাতে। ফলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ভূমিকা জাতীয় গতির পক্ষে কতটা সহায়ক এবং কতটা জনস্বার্থের পরিপূরক তা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক সময় বিধায় দেখা দেয় তাদের পদক্ষেপকে জোর হলো ইতিবাচক বলে প্রচার করে এবং বিরোধীরা তাকে একেবারেই প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু সংবাদপত্র উত্তর পক্ষের সর আলোচনা প্রকাশ করে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের অভিমত গঠন করতে পারে।

সংবাদপত্রের পাতায় আনীতণী বিশেষজ্ঞদের দেখা সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র, কলাম লেখকদের অধিক আমাদের দেশে তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে প্রতিকার, সেনাবাহিনীর ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে দুর্ঘটনা, পূর্ণ ভূমিকা রাখে। অবশ্য কখনো কখনো কোনো কোনো সংবাদপত্র বিশেষ গোষ্ঠী বা নদীর স্বার্থে জনমতকে তাদের পক্ষে টানার জন্য সঙ্গীণ উদ্দেশ্যপূর্ণ নানারকম প্রচারণায় লিখ হয়। কিন্তু হতে পারে না শেষ পর্যন্ত এসব সংবাদপত্রের পবহারের চেষ্টা হীন উসানি সংবাদ পরিবেশন করা উচিত।

উপসংহার:

জাতীয় জলপর খুব সহজেই যে কোনো পারে। সংবাদপত্রের কাজে যারা নিয়োজিত কাদের নিরপেক্ষ পরিবেশিত হলে জনগণের মঙ্গল সাধন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবার এবং সংলাপ নিরপেক্ষ, নির্মীত শিক্ষিতা হবে, ততই দেশের সফল। তাই সংবাদ প্রকাশ বা সম্পাদককে ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url