মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান প্রবন্ধ রচনা 2023 - writting by Composition.
মানবকল্যাণে বিজ্ঞান বাংলা প্রবন্ধ রচনা |
আরো পড়ুন :-
বর্ষাকাল বাংলা প্রবন্ধ রচনা 2023 - writting by Composition
ভূমিকা :
ইংরেজি ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- 'Necessity is the mother of invention' প্রয়োজনের তাগিদেই আবিষ্কারের জন্ম। জীবনসংগ্রামের তাগিদেই মানুষ অজানাকে জানতে চেয়েছে। অজানাকে জানার ইচ্ছা জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞানের, আর বিজ্ঞান দিয়েছে মানুষকে গড়ি, সেই সঙ্গে স্বনির্ভরতার আশ্বাস। শুরু হলো বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। রুমে অজ্ঞানতার অন্ধকার বিদূরিত হলো বিজ্ঞানের সাধনায়। মানুষ করায় করতে শিখল প্রকৃতির দুর্জয় শক্তিকে। বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে, আর প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে মানুষ অনিয়ন্ত্রিত প্রকৃতিকে আনল নিজের নিয়ন্ত্রণে, মানবকল্যাণে কাজে লাগালো বিজ্ঞানকে।
বিজ্ঞানচেতনার প্রসার:
সেই আদিম যুগে গোষ্ঠীবদ্ধ যাযাবর মানুষের জীবনে যুগান্তর আনলো আগুনের আবিষ্কার আর কৃষিকার্য প্রচলন। সেই সম গড়ে ওঠল ছোট ছোট গ্রাম। উদ্ভাবিত হলো আদি কৃষিযন্ত্র 'লাঙল'। মানুষ ক্ষেতে জলসেচের জন্য তার বৈজ্ঞানিক বৃত্তিকেও কাজে লাগাতে শিখল। শস্য সংরক্ষণ, ফসল থেকে আরও নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী (যেমন, কার্পাস থেকে সূতা) বানাতে শিখল, কুমোরের চাকা ঘুরিয়ে মানুষ বানাতে শুরু করল নানা ধরনের মাটির পাত্র।
ঐ সময় বয়ন শিল্পেরও উদ্ভব ঘটে। ভারি জিনিস সহজে তোলার জন্য ঐ সময় মানুষ কপিকল, আলম্ব প্রভৃতি যন্ত্রের সাহায্য নিতে শিখেছিল। 'প্যাপিরাস' জাতীয় নলখাগড়া থেকে মিসরের মানুষ প্রথম লেখার উপযোগী কাগজ তৈরি করল। ইরাক অঞ্চলের লোকেরা প্রথম চাকাযুক্ত গাড়ি বানিয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তর আনলো। পানি তোলার উপযোগী বিশেষ ধরনের পাম্প এবং যন্ত্রচালিত ঘড়ি প্রথম আবিষ্কৃত হয় চীনদেশে।
গ্রিসের মানুষেরা প্রথম পৃথিবী ও মহাকাশের মানচিত্র বানার। প্রাণিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, স্থাপত্যবিদ্যা এবং জ্যামিতির ক্ষেত্রে গ্রিকবিজ্ঞানীদের দান কম ছিল না। অন্যদিকে বীজগণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, শল্যচিকিৎসা, রসায়নশাস্ত্র, জীববিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের ও আরব দেশের বিজ্ঞানীরা যেসব তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছিলেন, তা মানুষের জীবনযাত্রাকে যথেষ্ট সহজ করে দেয়।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :
আজ বিজ্ঞানের জয়ধ্বনি ঘোষিত হলেও পৃথিবীতে তার সূচনা হয়েছিল অত্যন্ত দীনভাবে। বিজ্ঞানের বলে মানুষ আজ খনির অন্ধকারে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানের শক্তিবলে মানুষ দানবীয় নদীস্রোতকে বশীভূত করে ঊষর মরুপ্রান্তরকে করেছে জলসিঃ, ভূগর্ভের সঞ্চিত শস্য-সম্ভাবনাকে করে তুলেছে সফল, দূর করে দিয়েছে পৃথিবীর অনুর্বরতার অভিশাপ। বিজ্ঞান আজ উর্বরতা দিয়ে ক্ষরিষ্ণু বসুধাকে শস্যবর্তী করে তুলেছে। নব নব শিল্প প্রকরণে সে উৎপাদন জগতে এনেছে যুগান্তর এবং সুদূরকে করেছে নিকটতম। বিজ্ঞানের সাফলে জীবধাত্রী বসুধা আজ কলহাস্যমুখরা।
মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান :
প্রাগৈতিহাসিক
মানবের আগুন আবিষ্কারের দিন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানুষের অতন্দ্র সাধনা বিজ্ঞানকে করেছে। সমৃদ্ধ, সভ্যতাকে করেছে গতিশীল। বাষ্পীয় শক্তিকে সে করেছে বশীভূত,
বিদ্যুৎকে করেছে করায়ত্ত, মুঠোয় পুরে নিয়েছে পারমাণবিক শক্তিকে। ডাঙায় ছুটছে বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি, জলে ঢেউ-এর ঝুঁটি জাপটে
ধরে জাহাজ ছুটে চলেছে, আকাশ তোলপাড় করে উড়ে চলেছে দ্রুতগামী উড়োজাহাজ, মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে রকেট, স্পুটনিক, মহাকাশযান। অন্যদিকে বিজ্ঞান মৃত্যুর গ্রাস থেকে জীবনকে বাঁচিয়ে তুলতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দৈনন্দিন জীবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে পূর্ণাঙ্গরূপে কাজে লাগিয়েছে ইউরোপে শিল্পবিপ্লব ঘটে যাবার পর থেকে, উনিশ শতকে। ঐ সাই মানুষ বাষ্পের শক্তিকে নানা কাজে ব্যবহার করতে শিখে। তারপর আমরা ক্রমে ক্রমে বিদ্যুৎশক্তিকে কাজে লাগাতে শিখলাম। বিশ শতকে আমর জ্বালানি কয়লা ছাড়াও পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস এমনকি পারমাণবিক শক্তিকে মানুষের কল্যাণের কাজে লাগাতে পেরেছি।
বাষ্পশক্তি, প্রাকৃতিক গ্যাসের শক্তি, সর্বোপরি বিদ্যুৎশক্তির ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে নাগরিক জীবন থেকে গৃহস্থের ঘরে ঘরে। তাই আধুনিক কালে তার সাহায্য ছাড় আমাদের এক মিনিটও চলে
না। আর ঐ মিনিটের
হিসেব করার জন্য প্রয়োজন হয় ছোট বড় ঘড়ির। তার কোনটা আবার ইলেকট্রনিক।
বাষ্পশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের রান্নাঘরে প্রেসার কুকার গৃহিণীর কাজকে সহজ করে দেয়। তার সঙ্গে থাকে বৈদ্যুতিক বা গ্যাসের চুলা, এমনকি সৌরচুল্লী। বায়োগ্যাসে কোনো অঞ্চলে গ্রামের ঘরে ঘরে আলো জ্বলে, তাতে রান্নার কাজ সহজ হয়। পরিবহন ব্যবস্থায় বিজ্ঞান তো রীতিমত যুগান্তর এনেছে। রোগনির্ণয়েও তার ভূমিকা কম নয়।
আমোদ-প্রমোদের ক্ষেত্রে টেলিভিশন ও ডিডিও বাংলাদেশের
গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। ঘরে বসে আমরা এখন দেখছি এশিয়াড, বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বকাপ ক্রিকেট, অলিম্পিক গেমস ইত্যাদি খেলা। সৌরশক্তি চালিত পকেট ক্যালকুলেটর করে দিচ্ছে দুরূহ হিসাবনিকাশ। গৃহস্থালির কাজে কত রকম বৈদ্যুতিক
সরঞ্জাম যে আমরা ব্যবহার
করছি, তার হিসেব দেওয়া কঠিন।
যেমন
: রান্নার জন্য রয়েছে কুকিং রেঞ্জ, মশলাবাটা ও নানান খাদা
গুঁড়া করার মেশিন রয়েছে বাসন ও কাপড় ধোয়ার
যন্ত্র। এছাড়া ঘর সাফাই মেশিন,
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টাইপ থেকে শুরু করে ছোটদের জন্য রয়েছে ইলেকট্রনিক খেলনা।
বর্তমানে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবিসংবাদিত প্রভুত্ব। প্রভাতের শয্যাত্যাগ থেকে রাতের শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত বিজ্ঞান মানুষের খুবই অনুগত সহচর। রেডিও বা টেলিভিশনের প্রভাতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙে আমাদের। বিজ্ঞানের কৌশলে ততক্ষণে কলে পানি এসে যায়। প্রয়োজন মতো কখনো সে পানি উষ্ণ, কখনো বা শীতল। গরমের সময় বৈদ্যুতিক পাখা না হলে আমাদের চলে না।
ধনী লোকেরা এয়ারকুলার ব্যবহার করতে পারে। টেলিফোনের সাহায্যে হাজার হাজার মাইল দূরের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ-খবর নেওয়া যায়। প্রতিদিন বাজারে যাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। বিজ্ঞানের উদ্ভাবিত ফ্রিজের মধ্যে কয়েকদিনের বাজার এনে রেখে দেওয়া যায়। বাস, ট্রেন ও ট্যাক্সির সাহায্যে দ্রুতগতিতে স্থানান্তরিত হওয়া যায়। এসবই হচ্ছে বিজ্ঞানের কল্যাণে। এক কথায়, মন্তবর্তিত জীবনযাত্রা বর্তমানে আর কল্পনা করা যায় না।।
মানবকল্যাণে চিকিৎসাবিজ্ঞান :
আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ মৃত্যুর কবল হতে ফিরে আসতে সমর্থ হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক রঞ্জনের আবিষ্কৃত 'রঞ্জন-রশ্মি' (X-Ray), কুরী ও মাদাম কুরী আবিষ্কৃত 'রেডিয়াম' বিজ্ঞানজগতে যুগান্তর এনেছে। রঞ্জন রশ্মি এবং আলট্রাসনোগ্রাফীর সহায়তায় শরীরের অদৃশ্য বস্তু দৃশ্যমান হয়েছে। রেডিয়াম ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর ক্ষতের মারাত্মক বিষক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রতিহত করেছে।
পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ও স্টেপটোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধ আবিষ্কারের ফলে কোটি কোটি মানুষ নানান প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধির হাত হতে রক্ষা পাচ্ছে। লুই পাস্তুরের ইনজেকশন আবিষ্কৃত হওয়ার পর মানুষ জলাতঙ্ক রোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে। দুরারোগ্য সংক্রামক ব্যাধি বসন্তের জীবাণু নিবারণের জন্য ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন এডওয়ার্ড জেনার। এমনিভাবে বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের বহু অভাব দূরীভূত হয়েছে, আমরা আনন্দ লাভ করেছি, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছি। সুতরাং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের অবদান যথেষ্ট।
উপসংহার :
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে এক হয়ে গেছে বিজ্ঞান। মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের দানই শ্রেষ্ঠ। এজন্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর কাছে মানুষ চিরষণী। বিজ্ঞানের দানে সত্যিই মানুষ বিশ্বজয়ী হয়েছে। সভ্যতার ক্রমোন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের তুলনা নেই। বিজ্ঞানকে বাদ দিলে আজ আমাদের বেঁচে থাকা দুরূহ। বিজ্ঞানকে যদি ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার না করে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, তবে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
Very important post ❤️🥰.
Very helpfully post thanks share with us