নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশে বাংলা প্রবন্ধ রচনা 2023 - writting by Composition.

নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশে বাংলা প্রবন্ধ রচনা 2023 - writting by Composition.

নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ বাংলা প্রবন্ধ রচনা


আরো পড়ুন :- 

 মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার রচনা - By Composition


ভূমিকা :

শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা জীবনের মতো মহামূল্যবান। থেকেই অনুমান করা যায়, নিরক্ষরতা যেকোনো জাতির জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ। নিরক্ষরতা প্রতিটি জাতির জন্যই অভিশাপ। মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তি যেমন অন্যের গলগ্রহ হয়ে জীবনযাপন করে, নিরক্ষর ব্যক্তিকেও সমাজে তাই করতে হয়। নিরক্ষর ব্যক্তি অন্ধের সমান। অন্ধের মতোই তাকে অগ্রসর হতে হয়। তাই কোনো জাতির কাছেই নিরক্ষরতা কাম্য নয়

বাংলাদেশে নিরক্ষরতার অবস্থা :

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সমৃদ্ধির পেছনে রয়েছে শিক্ষার অবদান। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জীবনে দারিদ্র্যের অভিশাপ এসেছে ব্যাপক নিরক্ষরতার কারণে অর্থাৎ শিক্ষার অভাবে। বাংলাদেশে তার প্রভাব আরো ভয়াবহ এবং পরিণতি আশঙ্কাজনক

দেশের প্রায় ষোল কোটি মানুষের তেষট্টি ভাগ মাত্র তথাকথিত শিক্ষিত অর্থাৎ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন যারা কোনো রকমে নামমাত্র শিক্ষা পেয়েছে। ফলে যথার্থ শিক্ষিত লোকের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসছে। বাকিরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে শুধু যে নিজের পরিবারের জীবনকেই বেদনাকাতর করছে তা নয়, জাতির জন্য বয়ে এনেছে ভয়াবহ অভিশাপ।

নিরক্ষরতার জন্যই আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি অনগ্রসর এবং পঙ্গু নিরক্ষরতার জন্যই জীবনের সুখের আস্বাদন থেকে বাংলাদেশের মানুষ বঞ্চিত।

নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রয়োজনীয়তা :

নিরক্ষরতার অভিশাপ মাথায় নিয়ে কোনো জাতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। নিরক্ষরতা ব্যক্তিজীবনকে যেমন পঙ্গু করে, দেশ জাতিকেও তেমনি নিমজ্জিত করে অবনতির অন্ধকারে। তাই আমাদের জাতীয় জীবন থেকে এই নির্মম অভিশাপ দূর করতে হবে। বিশ্বের বহু দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হয়েছে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও একসময় নিরক্ষরতার অভিশাপ ছিল। ঐকান্তিক আগ্রহ প্রচেষ্টার সাহায্যে তারা তাদের জাতীয় জীবন থেকে নিরক্ষরতার দুঃখ দূর করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের জীবনে অবহেলার জন্য সমস্যা এখনো প্রকট। অবশ্য নিরক্ষরতা দূরীকরণ খুব সহজ কাজ নয় এবং তাতে সমগ্র জাতি অংশগ্রহণ না করলে এর রাহুগ্রাস থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।

তাই এমন কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, যার কার্যকারিতায় আমাদের জীবন থেকে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করা যায়। ইউরোপ আমেরিকার অধিকাংশ দেশেই শিক্ষার হার শতকরা শতভাগে উন্নীত হয়েছে। তাই তাদের দেশ হয়েছে এতটা উন্নত। আমরাও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে পারি।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপ :

বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই সংগ্রামী। পরাধীনতার শিকল ভেঙে তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছে। স্বাধীন দেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হলে দেশের মানুষকে শিক্ষিত হতে হবে। এই লক্ষ্য নিয়েই বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ।

স্বাধীনতার রঙিন সূর্য আমাদের জাতীয় জীবনে যে নবচেতনার সৃষ্টি করেছে তার প্রভাবে আমরা আত্মসচেতন হয়ে উঠেছি এই চেতনা থেকেই জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জাতীয় জীবনে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে ১৯৮০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযানের সূচনা হয়েছিল।

তখন লক্ষ্য ছিল পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থাৎ, ১৯৮৫ সাল নাগাদ জাতীয় জীবন থেকে এই সমস্যা দূর করা; তা সফল না হওয়ার কারণে ২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষার ঘোষণা দিয়ে সে সাথে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে গণশিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া মেয়েদের শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্যে ক্রমান্বয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বয়স্ক শিক্ষা চালু :

আমাদের অনেকেরই ধারণা শিক্ষার একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে, আর তা হলো শৈশবকাল। সময় পার হলে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় না। কিন্তু ধারণা যে ঠিক নয়, তা আজ নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আজ থেকে চৌদ্দ বছর আগে বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ () বলেছিলেন 'দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার সময়। যারা শৈশবে শিক্ষাগ্রহণ করে নি এবং বয়স্ক, তাদেরকে যে নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্ত করা যাবে না - তা নয়।

তবে তাদের আগ্রহ থাকতে হবে। এই বয়স্কদের নিরক্ষরমুক্ত করার জন্যই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের বয়স্ক লোকেরা দিনের বেলায় কাজকর্ম সেরে রাতের বেলায় এসব কেন্দ্রে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এলাকার শিক্ষিত লোকদের সহযোগিতায় কার্যক্রম নিরক্ষরতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনতে পারে।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা :

ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ। যুগে যুগে তারা দেশের জন্য, জাতির জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সফলতা এনেছে। আমাদের জাতীয় জীবনে আজ নানা সমস্যা বিরাজমান। তার মধ্যে নিরক্ষরতা একটি ভয়াবহ জটিল সমস্যা। সমস্যার কারণে দেশ এবং জাতি আজ মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। শিক্ষা ছাড়া যেকোনো কাজ ভালোভাবে করা যায় না। মাঠে যে কৃষক কাজ করে তারও লেখাপড়া জানা দরকার। বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যাতে সরাসরি নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন জাতীয় জীবন থেকে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করার কর্মসূচি পালন করে থাকে। সেসব সংগঠনের সাথে ছাত্রসমাজ জড়িত। এক্ষেত্রে ছাত্রদের আরো বেশি করে কাজে লাগানো উচিত। বিশেষকরে ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো ছুটির দিনগুলোতে কাজ করা। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও আছে গ্রীষ্মের ছুটি, রমযানের ছুটি, শীতের ছুটি ইত্যাদি। এসব ছুটিতে ছাত্রছাত্রীরা নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজ করতে পারে। দেশে অনেক গণশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে ছাত্ররা এসব কেন্দ্রে কাজ করলে আমাদের জাতীয় জীবন থেকে অচিরেই নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর হবে।

উপসংহার :

নিরক্ষরতার মতো এত বড় অভিশাপ আর নেই। আমাদের জাতীয় জীবন থেকে এই অভিশাপ দূর করতে হলে সুপরিকল্পিতভাবে ছাত্রসমাজকে কাজে লাগাতে হবে। ছাত্ররাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের মধ্যে যদি আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়, তবে যেকোনো সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url