বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রবন্ধ রচনা 2023 - written by Composition.
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা 2023
বাংলাদেশের প্রকৃতি প্রবন্ধ রচনা 2023 |
আরো পড়ুন :-
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা ও সমাধান প্রবন্ধ রচনা 2023
"এমন
স্নিগ্ধ নদী কাহার?
কোথায়
এমন ধুম্র পাহাড়?
কোথায়
এমন হরিৎ ক্ষেত্র
আকাশতলে
মেশে?
এমন
ধানের উপর ঢেউ খেলে যায়।
বাতাস
কাহার দেশে?" _ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
ভূমিকা :
প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এই রূপসী বাংলাদেশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, জলপ্রপাত ও বনভূমি এদেশকে করে তুলেছে অপূর্ব রূপময়। আবার পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, তিস্তা, কর্ণফুলী, যমুনা প্রভৃতি নদনদী এর সমভূমি অঞ্চলকে করেছে শস্য শ্যামলা ও অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী প্রকৃতি যে কী আশ্চর্য সুন্দর, কী নয়নাভিরাম তার রূপশোভা, কী অফুরন্ত তার লীলাবৈচিত্রা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ঋতুকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন না করলে তা অনুভব করা যায় না। তাই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এদেশে যুগে যুগে এসেছেন বহু বিদেশি পর্যটক কবিরা লিখেছেন কবিতা।
ভূপ্রকৃতি :
বাংলাদেশকে প্রকৃতির সুরমা লীলাক্ষেত্র বললে মোটেই অত্যুক্তি হয় না। এদেশের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চিরকাল ধরে মুগ্ধ কবিচিত্তে কাৰ্য্যস্রোত বইয়ে দিয়েছে— ভাবুকের হৃদয়ে অনির্বচনীয় ভাবের ঢেউ জাগিয়েছে। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে যেকোনো দিকেই দৃষ্টিপাত করি না কেন চোখ দুটো প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে ধন্য হয়, মনপ্রাণ আনন্দে ভরে ওঠে। কী পাহাড় টিলার রমণীয় শোভা, কী গাছপালা ও তৃণপুষ্ম শোভিত বনের মনোরম দৃশ্য, কী কলনাদিনী নদনদীর অপরূপ সৌন্দর্য, কী শ্যামল শোভাময় ফসলের খেত – সবই এদেশে সুন্দর ও অনুপম। বাংলাদেশের প্রকৃতির এরূপ সৌন্দর্য দেখেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছেন _
“ধনধান্য
পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা,
তাহার
মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের
সেরা;
ও
সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি
দিয়ে ঘেরা;
এমন
দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।"
বাংলাদেশে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে সৌন্দর্যের এতটুকু ভাটা পড়েছে। সাগর রাতদিন তার পা ধুয়ে দিচ্ছে, নদী তার কটিদেশ ও গলায় মেখলা ও চন্দ্রহারের মতো শোভা পাচ্ছে, মাঠের শ্যামলিমা তাকে শাড়ির মতো ঘিরে রেখেছে এবং সবুজ বনরাজি তার শিরে মুকুট পরিয়ে দিয়ে রানীর সাজে সাজিয়েছে। চট্টভূমি থেকে বরেন্দ্রভূমি পর্যন্ত সবখানে এ রূপের জোয়ার উথলে ওঠেছে— কোথাও এতটুকু কমতি নেই।
জলবায়ুর প্রভাব ও ষড়ঋতু:
বাংলাদেশের
এই যে এত সৌন্দর্য
এর পেছনে কাজ করছে অনুকূল জলবায়ু। কর্কটক্রান্তি তার ওপর দিয়ো গেলেও সাগর কাছাকাছি থাকায় এবং মৌসুমি বায়ু তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা
এখানে। অতিমাত্রায় অনুভূত হয় না। জুন মাসের শুরুতে বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এবং পূর্ব ও উত্তরের পাহাড়ি
এলাকায় বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটানা।
তখন
এখানে বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি এক অভিনৰ ৰূপ
ধাৰণ করে। নদনদী কানায় কানায় পানিতে ভরে যায়। মাঠে মাঠে শস্য উৎপাদনের আয়োজন চলতে থাকে। হাঁসেরা দল বেঁধে আনন্দে
সাঁতার কাটতে থাকে। ছোট বড় মাছেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটাছুটি করতে থাকে। শাপলা, কুমুদ প্রভৃতি ফুল ফুটে অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বর্ষার বর্ষণে অনেকটা কমে যায়। পাট ও আউশ ধানের
খেতগুলো সবুক্ততায় ভরে যায় ।
বর্ষার
পরে আসে শরৎকাল। তখন গ্রীষ্মের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। শরতের চাঁদনি রাতে কী বনের গাছপালা কী গৃহস্থের কুটির, কী গতিশীল নদীস্রোত
নতুন নতুন রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়। নানা রকমের ফুল ফোটে। শরতের শেষে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়। এর ফাঁকে চলে
আগে হেমন্তকাল। সোনালি ধানে মাঠকে মাঠ ভরে যায়। ফসলের সওগাত গৃহস্থের ঘরে ঘরে তুলে নিয়ে ধরণী এক সময় রিক্ত
হয়।
তখন আসে শীতকাল। সে সময় বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তীব্র শীত অনুভূত হয়। এবং শ্যামল প্রকৃতি যেন বুড়োদের মতো শীর্ণমূর্তি ধারণ করে। এরপর একটা সময় আসে যখন শীত ও গ্রীষ্মের মিশ্র আমেজ অনুভূত হয়। আছে বনকাল। গাছপালা ও তরুলতায় নতুন পাতা গজায় এবং বিচিত্র রঙের ফুল ফোটে। প্রকৃতি যেন নতুন সৌন্দার্য তার যৌবন ফিরে পায়।
বিভিন্ন দৃশ্য :
বাংলাদেশ
গ্রামপ্রধান দেশ। তার প্রত্যেকটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব র্যশালা।
যেদিকে চোখ যায় অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলেফলে ভরা গাছপালা, ভূপ পুষ্পশোভিত বন-বনানী ও
শামিল শসাতে এই অনুপম রূপসুধা
পান করে সকলের হৃদয়ে এক অভিনব আনন্দের
শিহরণ জাগে। কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা তেন করে পাকা শস্যের সোনালি সুন্দর মুখখানা বের হয়ে আসছে, আবার কোথাও বিশালদেহ বটবৃক্ষ প্রান্তরের এক স্থানে উর্ধ্ববাস্তু
হয়ে মৌন তাপদের মতো দাঁড়িয়ে সুশীতল ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দূর করছে।
কোথাও
তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ থেকে নীলিমা ছিনিয়ে আনার জন্য ওপর দিকে হাত বাড়িয়েই চলছে, আবার কোথাও দীঘির কাকচক্ষু কালো পানিতে লাল সাদা শাপলা ও কুমুদ ফুটে
অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তার করছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য বৈচিত্র্য
সবার মন আনন্দে ভরে
দেয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোটবড় অসংখ্য নদনদী তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তাকে স্নেহসিক্ত করে দিচ্ছে।
পদ্মা,
মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, ভিস্তা প্রভৃতি নদনদী বাংলাদেশের সমভূমি এলাকাকে শস্যশ্যামল করে তাকে সোনার দেশের গৌরবে ভূষিত করেছে । এসব নদীর
দৃশ্যও নয়নাভিরাম। দিনে সূর্যের কিরণে ও রাতে চাঁদের
হাসিতে তারা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। রং বেরাতের পাল
উড়িয়ে নদীর বুকে নীল পানি কেটে যখন হাজার হাজার নৌকা তর তর করে
সামনের দিকে ভেসে যায়, তখন হৃদয়ে এক অনির্বচনীয় ভাবের
সৃষ্টি হয়।
তীরে ফুলে ফুলে সাদা কাশবন দেখে হঠাৎ আমাদের মনে হয় কে যেন সেখানে মুঠোমুঠো জ্যোৎস্না ছড়িয়ে রেখেছে। তাতে আমাদের মন সত্যিই আনন্দে নেচে ওঠে। বাংলাদেশের প্রকৃতির মতো এমন অপরূপ সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথায়ও দেখা যায় না।
উপসংহার:
বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। ষড়ঋতুর খেলা চলে এদেশে। প্রত্যেক ঋতুতে এদেশ নতুন নতুন রূপ ধারণ করে। নতুন আনন্দ আর সৌন্দর্যে আমাদের মন ভরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মতো মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই।